সোমবার   ১৭ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩২   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৮

আড়াই ঘণ্টার রায় পাঠ, হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ​​​​​​​​​​​​​​

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৫  

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আড়াই ঘণ্টা ধরে রায় পড়ার পর শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

 

সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় রায় পড়া শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। বিকেল ২টা ৫৪ মিনিটে শাস্তির অংশ ঘোষণা করে রায় শেষ হয়। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন।

 

এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়। রায় ঘোষণার পুরো প্রক্রিয়া ট্রাইব্যুনালের এজলাস থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

 

আসামিদের অবস্থা

 

মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক, বর্তমানে ভারতের অবস্থান করছেন। একমাত্র গ্রেপ্তার থাকা আসামি সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

 

প্রসিকিউশনের অভিযোগ

 

প্রসিকিউশন শুনানিতে বারবার বলেছে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশেই নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহার করা হয়—এ কথা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন সাবেক আইজিপি মামুনও।

 

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে দেড় হাজার মানুষকে হত্যা এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করার নির্দেশ এসেছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে।

 

প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড এবং তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিহত পরিবার ও আহতদের মধ্যে বিতরণের আবেদন করেছিল। আদালত আজ মৃত্যুদণ্ডের অংশটি মঞ্জুর করেছে।

 

পাঁচটি অভিযোগ

 

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচ অভিযোগ হলো-


১) উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া


২) আন্দোলনকারীদের নির্মূল করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ
৩) রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা
৪) রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা
৫) আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা

 

মামলার দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া

 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়।


১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস) হয়।
• পরে মামুন ও আসাদুজ্জামানকে আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়।
• চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে ১২ মে
১ জুন ফরমাল চার্জ দাখিল হয়।
১০ জুলাই মামুন রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।
• মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন।
• ৩৯৭ দিন পর আজ রায় ঘোষণা হলো।

 

হাসিনার বিরুদ্ধে মোট চার মামলা

 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মামলার রায় আজ ঘোষিত হলেও মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা চলমান রয়েছে-


১) ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর ট্রাজেডি
২) গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা (২৩ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ আসামি)

ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে—রায় যা-ই হোক, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে তা কার্যকর হবে।

এই বিভাগের আরো খবর